ঢাকা , বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ , ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
হেরা ফেরি ৩-তে ফিরছেন টাবু বাশার-তিশার নতুন রোমান্সের গল্প ‘বসন্ত বৌরি’ ওজন কমাতে সার্জারি, প্রাণ গেল মেক্সিকান ইনফ্লুয়েন্সারের ‘স্কুইড গেম’ অভিনেত্রী লি জু-শিল আর নেই বিচ্ছেদের পর ফের নতুন প্রেম খুঁজছেন মালাইকা অরোরা? দেশের প্রেক্ষাগৃহে ‘বলী’ আসছে ৭ ফেব্রুয়ারি হামলার পর প্রথমবার জনসমক্ষে সাইফ আলী খান অবশেষে প্রকাশ্যে এলো চিত্রনায়িকা পপির স্বামী-সন্তানসহ ছবি সমালোচনা সহ্য না হলে উপদেষ্টা পদ ছেড়ে রাজনৈতিক দল করেন-রিজভী লালমনিরহাটে বিয়ে করে ফেরার পথে বরের মৃত্যু পুঁজি রক্ষার আন্দোলনে বিনিয়োগকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কমাতে, একীভূতকরণে নজর দেয়ার সুপারিশ বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে আরও কমার আশঙ্কা বান্দরবান সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে কিশোরের পা বিচ্ছিন্ন ট্রেনের ধাক্কায় ট্রাকের চালক সহকারী নিহত জগন্নাথ হলে সরস্বতী পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে দুই উপদেষ্টা রমজান মাসে গ্যাস বিদ্যুতের বড় সংকটের শঙ্কা বাংলাদেশকে সহায়তা করছে ব্রিটিশ সংস্থা তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরতে হবে-নাহিদ ইসলাম লোকজনকে অতিষ্ঠ করে ফেলছে তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা-স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
বিএফআইইউর তদন্ত

৩৫৩ কোটি তছরুপ কুদ্দুসের পকেটেই ১৮৪ কোটি টাকা

  • আপলোড সময় : ০৭-১০-২০২৪ ১১:২০:৩১ পূর্বাহ্ন
  • আপডেট সময় : ০৭-১০-২০২৪ ১১:২০:৩১ পূর্বাহ্ন
৩৫৩ কোটি তছরুপ কুদ্দুসের পকেটেই ১৮৪ কোটি টাকা
দুর্নীতি, প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের তহবিল থেকে ৩৫৩ কোটি টাকা তছরুপ করা হয়েছে। কোম্পানিটির বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও পেটিক্যাশ থেকে সরানো হয়েছে এসব অর্থ। আবার জালিয়াতির মাধ্যমে সোনালী লাইফের টাকায়ই কোম্পানিটির শেয়ারের মালিক হয়েছেন ১০ পরিচালক। এমন তথ্য উঠে এসেছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) পরিদর্শন প্রতিবেদনে। অর্থ তছরুপের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ) চিঠি দিয়েছে বিএফআইইউ।
এ বিষয়ে নেয়া ব্যবস্থার অগ্রগতি সম্পর্কেও সংস্থাটিকে অবহিত করতে বলা হয়েছে। বিএফআইইউর যুগ্ম-পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি গত ২২ সেপ্টেম্বর আইডিআরএকে পাঠানো হয়। সোনালী লাইফের ভাউচার, ইআরপি সফটওয়্যারের তথ্য, ব্যাংক, ফাইন্যান্স কোম্পানি, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি, রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান, সিকিউরিটিজ হাউজ ও গাড়ি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান (ব্যাংকের মাধ্যমে) থেকে সংগ্রহ করা তথ্য বিশ্লেষণ করে তহবিল তছরুপ সংক্রান্ত এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ।
বিএফআইইউর প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, সোনালী লাইফের ৩৫৩ কোটি টাকা তছরুপের সঙ্গে জড়িত কোম্পানিটির সাবেক চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানসহ আট পরিচালক, ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও অন্য দুই কর্মকর্তা। এছাড়া কোম্পানিটির ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার এক ভাই ও ফুপুর নাম উঠে এসেছে তহবিল তছরুপে জড়িত ব্যক্তিদের তালিকায়।
সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস নিয়মবহির্ভূতভাবে সোনালী লাইফের তহবিল থেকে নিয়েছেন ১৮৩ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ভবন বিক্রির নামে নিয়েছেন ১৩৯ কোটি ১০ লাখ টাকা। বাকি ৪৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা তিনি নিয়েছেন নিজের ও তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে। এই টাকা তিনি নেন ২০১৫ থেকে ২০২৩ সালে। সোনালী লাইফের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব ও পেটিক্যাশ থেকে এসব অর্থ নিয়েছেন বলে বিএফআইইউর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
বিএফআইইউর তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভবন বিক্রির নামে ১৩৯ কোটি ১০ লাখ টাকা নিলেও এই ভবন কেনার বিষয়ে সোনালী লাইফের বোর্ডসভার কোনো অনুমোদন নেই। অনুমোদন নেই বিমা খাত নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএর। এছাড়া ভবনটি ৩৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণের বিপরীতে যমুনা ব্যাংকের ফরেন এক্সচেঞ্জ শাখায় বন্ধক রাখা।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ভবন বিক্রির নামে নেয়া এই ১৩৯ কোটি ১০ লাখ টাকা থেকে জনতা ব্যাংকে সিডি অ্যাক্রিলিক বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ২৭ কোটি টাকা। ড্রাগন সোয়েটারের ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ২৩ কোটি টাকা। বাকি টাকা তিনি তার মালিকানাধীন যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে নিয়েছেন তার মধ্যে রয়েছে-ড্রাগন সোয়েটার্স বাংলাদেশ, ড্রাগন সোয়েটার্স অ্যান্ড স্পিনিং, ড্রাগন ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড কমিউনিকেশনস, সিডি অ্যাক্রিলিক বাংলাদেশ এবং ইম্পেরিয়াল সোয়েটার্স বাংলাদেশ।
তদন্তকারী প্রতিষ্ঠানটি বলছে, প্রতিবেদনটি প্রস্তুতের সময় মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের মতামত নেয়া হয়েছে। মতামতে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস জানিয়েছেন, তিনি ১৩৯ কোটি ১০ লাখ টাকা নিয়েছেন ইম্পেরিয়াল ভবনের ভাড়া বাবদ। তবে এর পক্ষে তিনি কোনো দলিলাদি দেখাতে পারেননি।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, সোনালী লাইফের ইআরপি সফটওয়্যার ও কোম্পানিটির বিভিন্ন ভাউচারের তথ্য অনুসারে ইম্পেরিয়াল ভবনের ভাড়া বাবদ ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা নেয়ার প্রমাণ পেয়েছে বিএফআইইউ। তবে বিএফআইইউ বলছে, পর্যাপ্ত দলিলাদি না পাওয়ায় মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস ভবনের ভাড়া বাবদ কত টাকা নিয়েছেন তা তারা নিশ্চিত হতে পারেনি।
২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সোনালী লাইফের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব থেকে নগদে উত্তোলন করা হয়েছে ১৬৯ কোটি ৯ লাখ টাকা। একক চেকের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নগদে উত্তোলন করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ২৬ জুন কোম্পানিটির এসবিএসি ব্যাংক থেকে একক চেকে এ টাকা তোলা হয়েছে। এই বিশাল অংকের টাকা নগদে উত্তোলন করায় তা তহবিল তছরুপের ইঙ্গিত বহন করে বলে মন্তব্য করা হয়েছে বিএফআইইউর তদন্ত প্রতিবেদনে।
২০১৯, ২০২০ ও ২০২২ সালে রূপালী ইন্স্যুরেন্সকে দেয়া হয়েছে ১ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ছয়টি ধাপে এসব টাকা দেয়া হয়েছে নন-লাইফ বিমা কোম্পানিটিকে। তবে এ অর্থের প্রকৃত সুবিধাভোগী বলা হয়েছে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসকে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল এই চার বছরে রাশেদ বিন আমান বেতনের বাইরে চার কোটি ছয় লাখ টাকা নিয়েছেন সোনালী লাইফ থেকে। সোনালী লাইফের হিসাব থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে এই টাকা নগদে তুলেছেন রাশেদ। তবে এই টাকা রাশেদ তছরুপ বা আত্মসাৎ করেছে কি না এমন কোনো মতামত দেয়া হয়নি প্রতিবেদন। ২০২০ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে রাশেদ তিনটি বিলাসবহুল গাড়ি কিনেছেন। এই গাড়িগুলোর মোট মূল্য সাত কোটি ১৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে মার্সিডিজ বেঞ্জ ই২০০কোপ ব্র্যান্ডের একাটি গাড়ি কিনেছেন এক কোটি ৪৭ লাখ টাকায়, মার্সিডিজ বেঞ্জ জিএলই৫৩ গাড়িটি কিনেছেন ২ কোটি ২০ লাখ টাকায় এবং সাড়ে ৩ কোটি টাকায় একটি ব্র্যান্ড নিউ পোরশে গাড়ি কেনেন। এসব গাড়ির মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে ঋণ নিয়ে এবং রাশেদের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে।
গাড়ির মূল্য ও গাড়ির বিপরীতে নেয়া ঋণের টাকা রাশেদ সোনালী লাইফ থেকে বিধিসম্মতভাবে নিয়েছে কি না পরিদর্শন চলাকালে পরিদর্শন দলকে তা নিশ্চিত করতে পারেনি সোনালী লাইফ। এছাড়া গাড়ির বিপরীতে নেয়া ঋণের কিস্তির টাকা সোনালী লাইফের অ্যাকাউন্ট থেকে পেটি ক্যাশের মাধ্যমে নগদে গ্রহণ করে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা হয়ে থাকতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিএফআইইউর প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, গুলশানে বিল্ডিং টেকনোলজি অ্যান্ড আইডিয়াস (বিটিআই) থেকে মীর রাশেদ বিন আমান ও ফৌজিয়া কামরুন তানিয়ার নামে ১৮ কোটি ৩৯ লাখ ৩৪ হাজার টাকা মূল্যের একটি অ্যাপার্টমেন্ট বুকিং দেয়া হয়। এই অ্যাপার্টমেন্টের মূল্য বাবদ ১৩ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয় ন্যাশনাল হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট থেকে ঋণ নিয়ে। বাকি পাঁচ কোটি ৩৯ লাখ টাকা পরিশোধ করেন রাশেদ ও ফৌজিয়া। আর ঋণের ১৩ কোটি টাকার মধ্যে তিন লাখ দুই হাজার টাকাও পরিশোধ করেন তারা।
বিটিআইকে সরাসরি পরিশোধ করা পাঁচ কোটি টাকার মধ্যে আড়াই কোটি টাকা পরিশোধ করা হয় রাশেদের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে। যার মধ্যে এক কোটি ৫০ লাখ টাকা ২০২০ সালে ও এক কোটি টাকা ২০২২ সালে পরিশোধ করা হয়। ২০২০ সালে পরিশোধ করা এক কোটি ৫০ লাখ টাকার মধ্যে ৫০ লাখ টাকা রাশেদ সোনালী লাইফ থেকে নিয়েছেন বলে মনে করছে বিএফআইইউ। বাকি দুই কোটি ৫৪ লাখ টাকা ২০২২ সালের ২৬ জুন ও ৫ জুলাই দুটি পে-অর্ডারে জমা করা হয় বিটিআইর অ্যাকাউন্টে। এই পে-অর্ডার দুটি করা হয় সোনালী লাইফের অ্যাকাউন্ট থেকে। দুটি পে-অর্ডারেরই ফরওয়ার্ডিং লেটারে স্বাক্ষর করেন সোনালী লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান নূর-ই-হাফজা ও ফৌজিয়া কামরুন তানিয়া।
ন্যাশনাল হাউজিং থেকে নেয়া ঋণের ১৩ কোটি টাকার মধ্যে ২০২২ সালের ১০ আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তিন কোটি ৩৭ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে রাশেদ ও তানিয়ার মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের যৌথ অ্যাকাউন্ট থেকে। রাশেদ ও তানিয়ার যৌথ ওই অ্যাকাউন্টটিতে অধিকাংশ টাকাই জমা হয়েছে নগদে। বিএফআইইউ মনে করছে, সোনালী লাইফের পেটিক্যাশের মাধ্যমে টাকা নিয়ে রাশেদ ও তানিয়া যৌথ অ্যাকাউন্টটিতে জমা করে থাকতে পারেন। ২০২০ থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে দুই দফায় পেটিক্যাশ থেকে ডেভেলপমেন্ট ইনসেনটিভ বাবদ বিভিন্ন ব্যক্তির নামে এক কোটি ৩৪ লাখ টাকা ও এক কোটি ৫৫ লাখ টাকা (মোট দুই কোটি ৮৯ লাখ টাকা) অনুমোদনবিহীনভাবে গ্রহণ করেছেন। তবে এই টাকা রাশেদ তছরুপ করেছেন কি না এমন কোনো মতামত দেয়নি বিএফআইইউ।
বিএফআইইউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে সোনালী লাইফের পরিশোধিত মূলধন ১৮ কোটি থেকে ১০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ২৮ কোটি টাকা করার অনুমোদন দেয় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। উদ্যোক্তা পরিচালকদের এই টাকা পরিশোধ করার কথা থাকলেও তা না করে সোনালী লাইফের সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংকের এসওডি অ্যাকাউন্ট থেকে আট কোটি ৯৫ লাখ ও এক কোটি ৫৫ লাখ টাকা নগদে উত্তোলন করে ১০ জন পরিচালকের নামে শেয়ারের মূল্য পরিশোধ বাবদ পে-অর্ডার ইস্যু করা হয়।
এসব পে-অর্ডার করা হয় ২৬ জুন ২০১৮ সালে। ওই দিনই এই পে-অর্ডারগুলো সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার এবং কমার্স ব্যাংকে সোনালী লাইফের নামে খোলা এসএনডি অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়। এসএনডি অ্যাকাউন্ট নম্বর-০০০২১৩০০০০৭৭২। পরে আবার এ অ্যাকাউন্ট থেকে ওইদিনই অপর একটি এসএনডি অ্যাকাউন্টে (নম্বর ০০০২১৩০০০০৩৩৪) এক কোটি ৩৭ লাখ এবং ২ জুলাই ২০১৮ তারিখে ৯ কোটি ১৩ লাখ টাকা জমা করা হয়। মূলত সোনালী লাইফের অর্থ দিয়েই ১০ জন পরিচালক কোম্পানিটির মূলধন বৃদ্ধিজনিত শেয়ার কিনেছেন, যা জালিয়াতি।
বিএফআইইউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্যালাক্সি হলিডেজ লিমিটেডকে বিভিন্ন দেশে ট্যুর, সেমিনার, ওমরা পালন ও অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা দেখার নামে ৩৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা দিয়েছে সোনালী লাইফ। তবে এই লেনদেনের ভাউচার ছাড়া কোনো প্রকার সহায়ক দলিলাদি প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বা হিসাব বিভাগের কাছে রক্ষিত নেই মর্মে পরিদর্শন দলকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অবহিত করেন। বিএফআইইউ মনে করছে, এই টাকা গ্যালাক্সি হলিডেজের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হয়ে থাকতে পারে এবং প্রতিষ্ঠানটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর রাশেদ বিন আমানের ওপরই এর দায়ভার বর্তায়।
ক্রাউন মানি চেঞ্জার কোম্পানির মাধ্যমে বিভিন্ন সময় সোনালী লাইফের ছয় কোটি ৪৬ লাখ টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে মনে করছে বিএফআইইউ। এসব টাকা দেয়া হয়েছে বিমা কোম্পানিটির পেটিক্যাশ ও বিভিন্ন ব্যাংক হিসাব থেকে নগদে উত্তোলন করে। হুন্ডি অথবা বাহকের মাধ্যমে এই টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, পাউন্ড কেনা, লন্ডনে অর্থ পাঠানো, লন্ডনে শপিং, দুবাই ট্যুর, লন্ডন কার্ড, সফটওয়্যার কেনা পারপাস, পরিচালক সফিয়া সোবহান চৌধুরী ও মোস্তফা কামরুস সোবহানের কন্যা মাহেরাকে প্রদান, মুখ্য নির্বাহী রাশেদের মেডিকেল ব্যয়সহ অন্য বাবদ এসব টাকা দেয়া হয়েছে ক্রাউন মানি চেঞ্জার কোম্পানিকে।
বিএফআইইউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোনালী লাইফের হিসাব থেকে ৭ কোটি ৬ লাখ টাকা স্থানান্তর করে শেয়ার কেনা হয়। এসব শেয়ার কেনা হয়েছে সাবেক মুখ্য নির্বাহী মীর রাশেদ বিন আমানের আত্মীয়-স্বজনসহ সোনালী লাইফের বিভিন্ন কর্মকর্তা, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে। কমার্স ব্যাংক সিকিউরিটিজ অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডে এসব ব্যক্তির নামে খোলা বিভিন্ন বিও হিসাবে শেয়ার কেনা বাবদ এই টাকা স্থানান্তর করা হয়।
সোনালী লাইফের তহবিল থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রায় দুই কোটি টাকার আর্থিক সুবিধা নেন সাবেক চেয়ারম্যান নূর-ই-হাফজাসহ মোস্তফা গোলাম কুদ্দুসের পরিবারের সদস্যরা। এর মধ্যে সাবেক চেয়ারম্যান নূর-ই-হাফসার অনিয়ম এক কোটি ১৫ লাখ টাকা। ভাইস চেয়ারম্যান ফৌজিয়া কামরুন তানিয়ার আত্মসাৎ ১১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। তাসনিয়া কামরুন আনিকার আত্মসাৎ ১১ লাখ ১২ হাজার টাকা। অবৈধভাবে শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল নিয়েছেন ৩০ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। মোস্তফা কামরুস সোবহানের আত্মসাৎ চার লাখ ১৩ হাজার টাকা। ভ্রমণ ও বৈদেশিক মুদ্র কেনায় মোস্তফা কামরুস সোবহানের মেয়েকে দেয়া হয় ২৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।
বিএফআইইউর তদন্তে বেরিয়ে আসা অনিয়মের বিষয়ে মন্তব্য জানতে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে মোস্তফা গোলাম কুদ্দুস বলেন, এসব মিথ্যা তথ্য। এগুলো ছাপালে আপনারা আইনের আওতায় আসবেন। এরপর ব্যস্ততা দেখিয়ে তিনি মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। কোম্পানিটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মীর রাশেদ বিন আমান দেশের বাইরে থাকায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স